শিশুদের এডেনয়েড হাইপারট্রফিঃ একটি নিরব ঘাতক
এডেনয়েড হচ্ছে একটি লিম্ফয়েড টিস্যূ যা ন্যাসোফ্যারিংক্সে থাকে। নাকের ঠিক পেছনের অংশ এবং আলজিহ্বার ঠিক উপরের অংশকে ন্যাসোফ্যারিংক্স বলে যা সাধারনত বাহির থেকে সরাসরি দেখা যায় না, কোন যন্ত্রের মাধ্যমে দেখতে হয়। এডেনয়েড বড় হয়ে গেলে, এটাকে এডেনয়েড হাইপারট্রফি বলে। যা শ্বাস প্রশ্বাসের অসুবিধাসহ আরো বিভিন্ন রকম শারিরীক ক্ষতি করে থাকে।শতকরা ২ থেকে ৩ শতাংশ শিশুদের শরীরে এডেনয়েড হাইপারট্রফি থাকে।
এডেনয়েডের কাজ কি?
এটি শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে এন্টিবডি তৈরির মাধ্যমে। তবে গবেষনায় দেখা গেছে ৪ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এডেনয়েড অপারেশনের মাধ্যমে নিয়ে ফেললে সাধারনত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার খুব একটা পরিবর্তন হয় না।
এডেনয়েড হাইপারট্রফির লক্ষণগুলি কি?
১. নাক বন্ধ থাকা: এজন্য বাচ্চারা মুখ হা করে শ্বাস নেয়। বাচ্চাদের খাওয়ার দাওয়ারে সমস্যা হয়। এজন্য শিশুদের শারিরীক বৃদ্ধি ব্যহত হয়।
২. নাক দিয়ে পানি পড়া
৩. সাইনাসের প্রদাহ
৪. নাক দিয়ে রক্ত পড়া
৫. গলার স্বর পরিবর্তন : কন্ঠস্বর কিছুটা মোটা মনে হয়, আনুনাসিক শব্দ উচ্চারণে অসুবিধা হয়।
৬. বারবার কান পাকা
৭. কানে পানি জমে যাওয়া: যার কারনে শিশুদের শ্রবনশক্তি কমে যায়।
৮. শিশুরা পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়।
#এডেনয়েড হাইপারট্রফির দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিসমূহ :
১. শ্রবনশক্তি কমে যাওয়া।
২. কানের পর্দার ভেতরের দিকে চলে যায়, যা কোলেস্টিটোমা তৈরি করে, যা পরবর্তীতে ব্রেইন পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।
৩. দীর্ঘদিন শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যার কারনে হার্ট ফেইলুর হতে পারে।
৪. স্বাভাবিক শারিরীক বৃদ্ধি ব্যহত হয়।
৫. চেহারার আকৃতি পরিবর্তন হয়ে যায়। নাক,উপরের ঠোঁট কিছুটা ছোট আকৃতির হয়ে যায়, উপরের তালু উচু এবং গভীর হয়ে যায়।
এডেনয়েড হাইপারট্রফির চিকিৎসা:
নাকের স্প্রে এবং মুখের কিছু ঔষধ দিয়ে এডেনয়েডের আকার কমানো এবং এর লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রনের কিছুটা প্রমান পাওয়া গেছে কিছু গবেষণায়, যা আমি নিজের করা গবেষণাতেও প্রমান পেয়েছি। তবে এটা অপারেশন করে অপসারণ করাটাই প্রকৃত চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত।
শিশুর অভিভাবকদের করনীয়:
এধরনের লক্ষণগুলি যদি কোন শিশুর মধ্যে পাওয়া যায় দ্রুত একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা করা উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারন এডেনয়েড হাইপারট্রফি রোগে আক্রান্ত শিশুর দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাসমূহ অপারেশনের পরেও সমাধান না হতে পারে। এজন্য সতর্কতা কাম্য।
ডাঃ মাহমুদ উল্লাহ্ ফারুকী
ডাঃ মাহমুদ উল্লাহ্ ফারুকী ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে (কে-৬২) এমবিবিএস এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এস পাশ করেন। বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের এই কর্মকর্তা বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাক, কান ও গলা রোগ বিশেষগ এবং হেড-নেক সার্জন হিসেবে কর্মরত আছেন।