অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ফোপড়া রোগ কি?
বয়স্ক মানুষ বিশেষ করে মহিলারা হঠাৎ পড়ে গিয়ে অথবা অল্প আঘাতে হাড় ভেঙ্গে ফেলে। ফলে অসহনীয় কষ্ট ভোগ করতে হয়, এমনকি অনেকের জীবনে নেমে আসতে পারে পঙ্গুত্ব। এ ধরনের সমস্যার অন্যতম কারণ হলো অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ফোপড়া রোগ।
অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ফোপড়া রোগ কী?
বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের হাড়ের ভিতরের উপাদানগুলির (বিশেষ করে ক্যালসিয়ামের) ঘনত্ব কমতে থাকে, ফলে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। মানবদেহের হাড়ের এই অবস্থাকে বলা হয় অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ফোপড়া রোগ।
অস্টিওপরোসিস কেন হয়?
- মানুষের দেহে কিছু কোষ আছে যারা হাড় গঠন করে, আর কিছু আছে যারা হাড় ক্ষয় করে।
- যখন হাড় ক্ষয়কারী কোষ হাড় গঠনকারী কোষের থেকে দ্রুত কাজ করে, তখন হাড় ক্ষয় হতে থাকে এবং ক্ষয় হতে হতে একসময় অস্টিওপরোসিস হয়।
কাদের হয়?
সাধারণত ৫০ বছর বয়সের বেশি…
– প্রতি ৩ জনে ১ জন মহিলা ও
– প্রতি ৫ জনে ১ জন পুরুষ অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হতে পারে।
কারা ঝুঁকিতে আছেন?
- কম পরিশ্রমকারী মানুষ
- হরমোন সমস্যা
- ক্যালসিয়ামের ঘাটতি
- আর্থ্রাইটিস বা বাতরোগ
- ওষুধ, যেমন: স্টেরয়েড
- অতিরিক্ত কফি পান, ধূমপান, মদ্যপান করা
- মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে
- জরায়ুর, ওভারীর অপসারণ ইত্যাদি।
লক্ষণসমূহ কী কী?
- কোমরে ব্যথা
- পিঠে ব্যথা
- উচ্চতা কমে যাওয়া
- হাঁটাচলা অথবা কাজ করলে ব্যথা বেড়ে যায়
- সামান্য আঘাতে হাড় ভেঙ্গে যাওয়া
কীভাবে রোগ নির্ণয় হয়?
রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগের ইতিহাস ভালো করে জানা জরুরি। ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো:
– এক্স-রে
– রক্তের ক্যালসিয়াম
– বি. এম. ডি (হাড়ে ক্যালসিয়ামের ঘনত্ব নির্ণয়ের পরীক্ষা)
চিকিৎসা কী?
ওষুধঃ
সাধারণত নিম্নোক্ত ওষুধগুলো বেশি ব্যবহৃত হয়
– ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি
– বিসফোসফোনেট, ডেনোসুমেব
– হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি
– ক্যলসিটোনিন, প্যারাথাইরয়েড হরমোন ইত্যাদি।
** বি. দ্র.: যেকোনো ওষুধের মাত্রা, সেবনবিধি ইত্যাদি রোগীর শরীরের সার্বিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। সুতরাং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।
ব্যায়ামচর্চাঃ
-হাঁটাহাঁটি করা, স্বল্প গতিতে দৌড়ানো
-হাইকিং (লম্বা পথ হাঁটা)
-দড়ি লাফানো, টেনিস খেলা ইত্যাদি।
** বি. দ্র.: বেশি ঝুঁকিপূর্ণ রোগীর জন্য বেশি ধকল সম্পন্ন ব্যায়াম প্রযোজ্য নয়।
সঠিক খাদ্যাভ্যাসঃ
– দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার: যেমন, কম চর্বি বা চর্বিমুক্ত তরল দুধ, দধি, পনির ইত্যাদি।
– মাছ: সামুদ্রিক মাছ, (বিশেষ করে ছোট মাছ কাঁটাসহ)
– গাঢ় সবুজ শাকসবজি
– লেবুজাতীয় ফল, বাদামজাতীয় খাবার ইত্যাদি।
ফিজিওথেরাপিঃ
এটি একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। বয়স্কদের যেহেতু এই রোগ বেশি হয় সেহেতু ওষুধের ব্যবহার যত কম করা যায় তত ভালো। একজন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রোগীর সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ফিজিওথেরাপির পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
প্রতিরোধ ব্যবস্থাঃ
প্রতি বছর ৬৫ বছরের বেশি বয়সী লোকের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মাটিতে পড়ে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে হাড় ভাঙ্গার মতো ঘটনা ঘটে। তাই পড়ে হাড় ভাঙ্গা প্রতিরোধে করণীয় জানা জরুরি।
সার্জারিঃ হাড় ভেঙ্গে ফেললেই শুধুমাত্র শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন পরে।
পরিণতি কি?
→কষ্টদায়ক হলেও, এটি কোন প্রাণঘাতী রোগ নয়
→আপনি অচল হয়ে যাবেন না
→সঠিক চিকিৎসা নিলে এ রোগ নিয়ন্ত্রন করা যায়
→চিকিৎসা না নিলে হাড় ভেঙ্গে পঙ্গুত্ব হতে পারে।
ডাঃ মাহফুজুর রহমান এমবিবিএস পাশ করেন দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ থেকে। তিনি ফিজিক্যাল মেডিসিন এ এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। বাত-ব্যথা,মেরুদন্ড-জয়েন্ট রোগ,আর্থ্রাইটিস ও প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়মিত চেম্বার করছেন পার্কভিউ হসপিটালে। ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আপনাকে ব্যথামুক্ত সচল জীবন উপভোগ করতে সাহায্য করবে, ইনশা-আল্লাহ।