মেরুদণ্ডে টিবি বা যক্ষা নির্ণয় ও চিকিৎসা
মেরুদণ্ডে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। কোমর ব্যথা, পিঠ ব্যথা থেকে শুরু করে কোমরে টিবি বা যক্ষ্মাও হতে পারে।মেরুদণ্ডে টিবি বা যক্ষায় অনেক সময় মানুষ বুঝতে পারে না।
মেরুদন্ডে টিবি ট্রিটমেন্ট না করালে রোগী পঙ্গু হয়ে যাওয়ার ঝুকি থাকে।
মেরুদণ্ডে সমস্যা এর কোনগুলোর ক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন পড়ে ?
মেরুদণ্ডের যে সমস্যাগুলো নিয়ে রোগীরা চিকিৎসকদের কাছে আসেন, এর মধ্যে প্রধানত আসে কোমরে ব্যথা নিয়ে। এর পর বলেন ঘাড়ে ব্যথা, পিঠে ব্যথা এসব সমস্যার কথা। বেশিরভাগ এই কোমরে ব্যথা বা ঘাড়ে ব্যথা সাধারণ ব্যথা। এগুলোর জন্য যদি চিকিৎসা করি তা-ও ভালো হয়, যদি চিকিৎসা নাও করি বিশ্রাম নিলে ভালো হয়। এগুলোর ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার কারণ থাকে। কোমরে ব্যথার সঙ্গে পায়ে ব্যথা হয়, কোমরে ব্যথার সঙ্গে প্রস্রাব-পায়খানা বন্ধ হয়। কোমরে ব্যথার সঙ্গে পা অবশ হয়ে যায়, হাঁটতে পারে না। তখনই একে বলে রেড সাইন। তখন আমাদের চিন্তা হয়, এই রোগীর কোনো ডিস্ক প্রলাপস হলো কি না। এই রোগীর মেরুদণ্ডে টিউমার হলো কি না, এই রোগীর সংক্রমণ হলো কি না বা অন্য কোনো কিছু হলো কি না। তখন আমরা এমআরআই করে রোগ নির্ণয় করার চেষ্টা করি।
রোগ নির্ণয় করার পর করণীয় কী ?
এ ধরনের সমস্যা হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সার্জন হিসেবে আমাদের কাছে এ ধরনের রোগী এলে আমরা তাকে ভালোভাবে দেখে নির্ণয় করার চেষ্টা করি, সমস্যাটি কেন হয়েছে। অনেক সময় নন-মেডিকেল কারণ যদি হয়, আমরা একে ওষুধপত্র দিয়ে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করি। আর যদি মনে হয়, না কোনো সার্জিক্যাল রোগ হয়েছে, সে ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে একটি সাধারণত এক্স-রে করি। এক্স-রেতে না বোঝা গেলে পরে এমআরআই, সিটি স্ক্যান করে কারণ নির্ণয় করি। ডিস্ক প্রলাপসের ক্ষেত্রে এক মাস কনজারভেটিভ চিকিৎসা দিই। যদি ভালো না হয়, তখন হয়তো আমরা অস্ত্রোপচারের কথা বলি। এই ডিস্ক প্রলাপসের বিভিন্ন রকমের অস্ত্রোপচার আছে, আমরা আগে চার-পাঁচ ইঞ্চি ইনসেশন দিয়ে অনেক বড় কেটে অস্ত্রোপচার করতাম। এখন মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে এক ইঞ্চি ইনসিশন দিয়ে করি। সকালে অস্ত্রোপচার করে বিকেলে ছেড়ে দিই। ১ দশমিক ২ সেন্টিমিন্টার আমরা ক্যামেরা ঢুকাই। এটা এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করে এক ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে ছেড়ে দিতে পারি। এটা হলো ডিস্ক প্রলাপসের ক্ষেত্রে। আর স্পাইনাল টিউমার যদি হয়, টিউমারের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার ছাড়া কোনো গতি নেই। আমরা অস্ত্রোপচার করতে বলি, দ্রুত অস্ত্রোপচার করে নেওয়ার চেষ্টা করি। আর যদি দেখা যায় যে কোমরের হাড় কোনো কারণে ভেঙে গেছে, তখন অস্ত্রোপচার করে।
যদি টিবি হয় ?
যদি টিবি হয়, এ ক্ষেত্রে আমরা খেয়াল করি যে এটা মেরুদণ্ডের স্থিতিস্থাপকতা ঠিক আছে কি না। যদি স্থিতিস্থাপক হয়, তাহলে আমরা টিবির ওষুধ দিয়ে রোগীকে শুয়ে থাকতে বলি। তখন রোগী আস্তে আস্তে ভালো হয়। যদি ভার্টিব্রাকে খেয়ে ফেলে, তখন এটাকে ঠিক করে দিই।
একজন মানুষের টিবি হলে কী করে থাকেন ?
রোগটি টিবি। টিবির যে চিকিৎসা, সেটা আমাদের দিতেই হবে। তবে এই অ্যান্টিটিউবারকুলার ওষুধ দেওয়ার ক্ষেত্রে, ফুসফুসের টিবির ক্ষেত্রে আমরা ছয় মাস বা নয় মাসের ওষুধ দিই। তবে হাড়ের টিবি যদি হয় বা মস্তিষ্কের টিবি যদি হয়, সে ক্ষেত্রে আমরা ১৫ মাস বা ২৪ মাস বা আরো বেশিদিন দিতে পারি। এ জন্য সাধারণ মানুষের ধারণা হলো, অনেক সময় ওষুধ লিখে দিই। আপনি ২৪ মাস ওষুধ খাবেন, তারা খেতে চায় না। বা অনেকে মনে করেন, ডাক্তার সাহেব কি ভুল করে দিলেন কি না? বা এত দিন খেলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে কি না। আরেকটি হলো ফিক্সিজন করে ফেলা। যে যন্ত্রটি লাগিয়ে দেওয়ার কথা, সেটি অস্থিতিস্থাপক হয়, এটাও করতে হবে। টিবির ওষুধও দিতে হবে। সার্জারির প্রয়োজন হলে করতে হবে। তবে টিবির যে চিকিৎসা, সেটা করতেই হবে।
ডাঃ ইসমাইল হোসেন
ডাঃ ঈসমাইল হোসেন পার্কভিউ হসপাতালে কনসালটেন্ট নিউরোসার্জন হিসেবে কর্মরত আছেন।