জেরিয়াট্রিক মেডিসিনঃ অবহেলিত একটি বিষয়
চিকিৎসা বিজ্ঞানে বয়স্কদের স্বাস্থ্য সেবা দেবার শাখার নাম জেরিয়াট্রিক মেডিসিন। আমাদের দেশে খুব অবহেলিত একটা বিষয়। মূল সমস্যা হলো এখানে রোগীকে প্রচুর সময় দিতে হয়। আবার ফোনে নিয়মিত বাসায় রোগীর সেবাদানকারীর থেকে ফলোআপ নিতে হয়।অনেক সময় চিকিৎসককে রোগীর বাসায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসতে হয়।
উনাদের সমস্যা থাকে অনেকগুলো, তাই চিকিৎসককে ক্রিটিকাল এনালাইসিস ও পড়াশোনা করতে হয়। এই সব কারণে নন জেরিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে জেরিয়াট্রিক সমস্যার ভাল সমাধান হয় না। বয়স্কদের শারীরীক সমস্যাগুলোও অন্যদের থেকে আলাদা হয়।
Common problems faced by elderly people include falls with or without fracture, delirium, dementia, incontinence, poor mobility and frailty.
অনেক বয়স্ক রোগীর স্বজনেরা রোগীকে অজ্ঞান অবস্হায় নিয়ে এসে বলেন পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছেন। আমি বলি, পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়েছে নাকি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে….. অনেক সময় দেখি কেউ বার বার পড়ে যাচ্ছেন… আসলে উনি চোখে কম দেখেন বা উনার হার্টের ছন্দের সমস্যা।
আর পড়ে গিয়ে যদি হাড্ডি ভাঙ্গে তবে তো সর্বনাশের ষোলকলা পূর্ণ হয়। এই হাড্ডি ভাঙ্গা উনাকে যমের দূয়ারে পৌঁছে দেবার জন্য যথেষ্ট। অস্টিওপোরোসিসের কারণে বয়স্কদের অল্প আঘাতে হাড্ডি ভাঙ্গার ঝুঁকিও বেশী থাকে। অনেকে আবার বছরের পর বছর গ্যাসের ঔষধ খান। কেউ বলেন এইটা না খেলে নাকি পটি হয় না। কেউ বলেন খাবার হজম হয় না। কেউ বলেন পেট ফেঁপে থাকে। ফলাফল অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ানো।
আবার বয়স্কদের রোগের লক্ষণও হয় ভিন্ন। নিউমোনিয়ায় তরুণ দের হয় জ্বর, কাশি, বুকে ব্যথা। বয়স্কদের নিউমোনিয়া হলে দেখি কথা বার্তা নাই ধুম করে অজ্ঞান হয়ে যায়। একই ঘটনা হয় পস্রাবের নালীতে ইনফেকশন হলেও।
অনেক স্বজনদের দেখি বয়স্কদের চিকিৎসা নিয়ে ত্যক্ত বিরক্ত.. কঠিণ জগৎ, সবার নিজস্ব জীবন জটিলতা আছে, তাতে ভুলে যান বয়স্ক এই মানুষটা সারা জীবন তাদের জীবনকে সহজ করতে ব্যয় করেছেন।
এক্সপায়ার ডেট পার হবার পর ফেলে দেওয়াটা অর্থনীতির বিচারে লাভ জনক হলেও সম্মানজনক নয়, অমানবিকতা তো চরম। আর যা শেখাবেন তা নিজের উপরেই আসবে, এটাই কর্ম ফল।
আমাদের বয়স্করা ভাল থাকুক। আমাদের দেশে জেরিয়াট্রিক মেডিসিনের বিকাশ হোক, এই কামনা করি।
ডাঃ রাজীব ঘোষ
ডাঃ রাজীব ঘোষ এমবিবিএস পাশের পর মেডিসিন বিষয়ে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস এন্ড সার্জনস (বিসিপিএস) থেকে মেডিসিন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি এমসিপিএস ও এফসিপিএস এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হৃদরোগ এর উপর এমডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের এই চিকিৎসক বর্তমানে রাঙামাটি সরকারী মেডিকেল কলেজ সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।