রক্তের রোগ মাল্টিপল মায়েলোমা
মাল্টিপল মায়েলোমা একটি রক্তের রোগ। এটি এক ধরণের রক্তের ক্যান্সার। তবে রক্তের ক্যান্সার বলতে আমরা সাধারণত খুব জটিল আর এগ্রেসিভ যেসব রোগ বুঝি অনেক মাল্টিপল মায়েলোমা সেই তুলনায় সবসময় অত জটিল রোগ নয়। বিশেষ করে প্রথম দিকে ধরা পরলে এবং আরো কিছু ফ্যাক্টরের উপর ভিত্তি করে বেশ কিছু মালিটপল মায়েলোমা রোগীদের রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকার বেশ সম্ভাবনাও আছে ইনশা আল্লহ।
মাল্টিপল মায়েলোমা এর লক্ষনঃ
মাল্টিপল মায়েলোমার লক্ষণ বিভিন্ন রকম হয়।যেমন শরীরে বিভিন্ন মাত্রার জ্বর কাশি তথা বারবার ইনফেকশন হতে পারে।
শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে। বাইরে থেকে রক্ত দিতে হতে পারে।
হাড়ে ব্যথা বিশেষ করে কোমরে, মেরুদন্ডে ব্যথা মাল্টিপল মায়েলোমা রোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে একে বাত বা টিবি রোগ বলে ভুল করেন অনেকেই।
বারবার শরীরে রক্ত বা হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া, শরীরে রক্ত নিতে হওয়া মাল্টিপল মায়েলোমার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
মাল্টিপল মায়েলোমা রোগীদের কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া বা রক্তে ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়ার প্রবনতা থাকে। অনেক সময় কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার বা ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় রোগীর আসলে মাল্টিপল মায়েলোমা হয়েছে।
অনেক সময় চামড়ায় বিভিন্ন ছোট বড় লাল,নীলচে, কাল দাগ আসা, মাড়িতে রক্তপাত হতে পারে মাল্টিপল মায়েলোমার লক্ষণ। অনেক সময় মাল্টিপল মায়েলোমার রোগীগণ আসেন হাত পা অবশ বা প্যারালাইসিসের সমস্যা বা হঠাৎ রোগী অজ্ঞ্যান হয়ে যাওয়া, স্ট্রোক বা অস্বাভাবিক আচরণের সমস্যা নিয়ে।
কখনো কখনো রক্তের প্লেটলেট কমে যাওয়া, শ্বেতকণিকা বা WBC কমে যাওয়া , (ESR) ই. এস. আর. বেড়ে যাওয়া তথা রক্তের সিবিসি রিপোর্টের বিভিন্ন অস্বাভাবিক হ্রাস বা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে মাল্টিপল মায়েলোমা। এক্সরে বা এম. আর. আই বা সিটি স্ক্যান রিপোর্টে কোমর মেরুদন্ডের হাঁড় ক্ষয়, মেরু দন্ড বা কোমরের বা অন্যান্য হাঁড় ভাঙা ইত্যাদির পেছনের কারণ হতে পারে মাল্টিপল মায়েলোমা।
মাল্টিপল মায়েলোমা রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে রক্তপরীক্ষা করা হয়। এর সাথে বোন ম্যারো ও ট্রেফাইন বায়োপ্সি পরীক্ষা, রক্তের বা প্রস্রাবের বিভিন্ন প্রোটিনের পরীক্ষা করা হয়। ফ্লো সাইটোমেট্রি পরীক্ষা,ইমিউন হিস্টোকেমিস্ট্রি পরীক্ষা ও সাইটো জেনেটিক পরীক্ষা রোগ নিশ্চিত করতে ও রোগের স্টেজ বা মাত্রা বুঝতে সাহায্য করে। এক্সরে, সিটি স্ক্যান, এম আর আই পরীক্ষা, কিডনির পরীক্ষা, রক্তের ক্যালসিয়ামের পরীক্ষা মাল্টিপল মায়েলোমা রোগ নির্ণয় ও রোগ কতটুকু ছড়িয়েছে সেটা বুঝতে সাহায্য করে। পূর্ণাংগ পরীক্ষা নীরিক্ষার মাধ্যমে মাল্টিপল মায়েলোমার স্টেজ টাইপ ইত্যাদি নির্ণয় করলে সঠিক চিকিৎসার প্রটোকল নির্ণয় এবং কোন মাত্রার ওষুধ কতটা কাজ করবে সেটা নির্ণয় সহজ হয়।
মাল্টিপল মায়েলোমা এর চিকিৎসাঃ
দীর্ঘ মেয়াদি রোগ মাল্টিপল মায়েলোমার চিকিৎসা হল বিভিন্ন মাত্রার কেমোথেরাপি ও ইমিউন থেরাপি । কিছু ক্ষেত্রে রেডিও থেরাপি লাগতে পারে। নির্দিষ্ট সময় পরপর একাধিক সাইকেল কেমো থেরাপি দেওয়া হয়। সাধারণত চার সাইকেল কেমো থেরাপির পর পূনরায় বেশ কিছু পরীক্ষা করে ওষুধের কার্যকারিতা দেখা হয়। এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বীদ্ধান্ত নিতে হয় যে আগের ওষুধ চলবে না নতুন ওষুধ দিতে হবে নাকি দেরি না করে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট এ যেতে হবে। অনেক সময় রোগীর অবস্থা অনুসারে প্রথম থেকেই কেবল মাত্র মুখে খাওয়ার ওষুধের মাধ্যমেই কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে শুরুতেই স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট অনেক সম্মানিত রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ স্যারগণ সাজেস্ট করেন।
বাংলাদেশেই মাল্টিপল মায়েলোমার সকল চিকিৎসা হচ্ছে। সব বিভাগীয় শহরেই সম্মানিত হেমাটোলজিস্ট বা রক্তরোগ বিশেষজ্ঞগণ এই রোগের ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করছেন। চট্টগ্রাম শহরেও মাল্টিপল মায়েলোমার ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয়ের সকল পরীক্ষা এবং কেমো থেরাপি এবং রেডিও থেরাপি দেওয়ার সুবিধা রয়েছে। তাই মাল্টিপল মায়েলোমা সংক্রান্ত কোন সাহায্যের দরকার হলে আপনার নিকটস্থ সম্মানিত রক্তরোগ ও রক্তক্যান্সার বিশেষজ্ঞগণের সাথে যোগাযোগ করুন।
ডাঃ জামাল তানিন
চট্টগ্রামের প্রথম এমডি ডিগ্রীধারী ব্লাড ক্যান্সার ও রক্ত রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের পার্কভিউ হাসপাতালে রক্ত ক্যান্সার ও রক্ত রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন।