এনাল ফিসার বা গেজ রোগের উপসর্গ, কারণ ও চিকিৎসা
এনাল ফিসার হল মলদ্বার ছিঁড়ে যাওয়া। এনাল ফিসার হলে মলদ্বারে ব্যাথা হয় ও মলত্যাগ করার সময় মলদ্বার দিয়ে রক্ত বের হয়। এনাল ফিসারের অনেক রুগি আছে। অনেকেই এনাল ফিসার কে পাইলস ভেবে ভুল করেন।
এনাল ফিসারের রোগের উপসর্গ কি?
- মলতাগের সময় ও মলতাগের পর মলদ্বারে তীব্র ব্যাথা (যা কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে)
- মলের সাথে তাজা লাল রক্ত যেতে পারে
- কিছু ক্ষেত্রে ব্যাথা অল্প বা নাও থাকতে পারে
- মলদ্বারে বাইরে ও ভিতরে গোঁটা বা ফুলা থাকতে পারে
- মলত্যাগে ভীতি, ব্যাথার কারনে মলত্যাগে অনীহা
এনাল ফিসার কেন হয়?
- মল যদি শক্ত ও শুষ্ক হয় তাহলে মলদ্বারে আঘাতের ফলে মলদ্বার ছিঁড়ে গিয়ে এই রোগ হও
- মল নরম বা ডাইরিয়া হলেও ফিসার হতে পারে
- যাদের মলদ্বারের চারপাশের মাংশপেশি বেশি টাইট থাকে তাদের ফিসার হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে (মলদ্বার টাইট থাকলে রক্ত সরবরাহ কমে যায়, ফলে এনাল ফিসারের ঘা শুকাতে পারেনা)
- এছাড়া মলদ্বারের প্রদাহ বা টিউমারের কারনে ফিসার হতে পারে
এনাল ফিসারের প্রকারভেদ:
এনাল ফিসার ২ ধরনের। তীব্র (Acute) ও দীর্ঘস্থায়ী (Chronic)। দীর্ঘস্থায়ী ফিসারে মলদ্বারের ভেতরে ও বাইরে গোঁটা থাকে এবং এর চিকিৎসা কঠিন।
এনাল ফিসারের চিকিৎসা কি?
- মল নরম রাখার জন্য বেশি করে শাক সবজি, সালাদ, পানি বেশি করে খেতে হবে
- মল নরম রাখার জন্য ইসবগুলের ভুশি বা ঔষধ খেতে হবে মলদ্বারে ব্যাথা কমার জন্য মলম এবং মলত্যাগের পর ও দিনে কয়েকবার সিজ বাথ( কুসুম গরম পানিতে লবন দিয়ে দিয়ে কোমর ডুবিয়ে ১০-২০ মিনিট বসে থাকতে হবে)নিতে হবে। সিজ বাথ মলদ্বারের আঁটসাঁট ভাব কমিয়ে দেয়, মাংসপেশিকে শিথিল করে ফলে ফিসার ভাল হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
- অন্যান্য ঔষধ যেমন নাইট্রোগ্লিস্যারীন মলদ্বার শিথিল করার জন্য ব্যাবহার করার যেতে পারে।
- বেশি ব্যাথার ঔষধ ব্যাবহার করা উচিত নয়
- দীর্ঘস্থায়ী ফিসারের ক্ষেত্রে অপারেশন দরকার হতে পারে
এ সমস্যা কি আবার হতে পারে?
নিয়ম কানুন মেনে চলা ও ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা করার পর মল যদি আবার শক্ত হয় বা মলদ্বারে আঘাত পেলে আবার ফিসার হতে পারে। একারনে মলদ্বার ব্যাথা, রক্তপাত বন্ধ হলেও মল নরম রাখা উচিত, শাকসবজি, সালাদ, পানি বেশি খাওয়া ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে। যদি কোন সুনির্দিষ্ট কারন ছাড়া ফিসার হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে।
ঔষধের মাধ্যমে ফিসার ভাল না হলে কি করার আছে?
- নিয়ম কানুন মেনে চলা ও ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা করার পরও ফিসার ভাল না হলে রোগীকে আবার পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ। মল সবসময় শক্ত বা তরল হলে, মলদ্বার ছোট হয়ে গেলে বা মাংশপেশি টাইট থাকলে ফিসার ভাল নাও হতে পারে। অন্ত্রের প্রদাহ রোগ, অন্ত্রের সংক্রমণ বা মলদ্বারে টিউমার হলে ফিসার ভাল হয়না।
- যেসব রুগী অনেকদিন ধরে মলদ্বারে ব্যাথার অভিযোগ করেন তাদের কলনস্কপি পরীক্ষা বা অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে পরীক্ষা করা উচিৎ।
এনাল ফিসারে সার্জারির ভুমিকা কি?
এনাল ফিসারের সার্জারি ২ ধরনের। এক হল মলদ্বারের পেশীতে বটুলিনাম ইনজেকশন (Botulinum toxin) দেয়া এবং দুই, অপারেশন করে মলদ্বারের পেশীর কিছু অংশ কেটে দেয়া (Lateral internal sphincterotomy)। এনাল ফিসারের অপারেশন করে রুগী ১ দিনের মধ্যে বাড়ি চলে যেতে পারে। এই রোগের অপারেশনের প্রধান লক্ষ্য হল মলদ্বার বা পায়ূপথের পেশীকে শিথিল করা, ফলে মলদ্বার ব্যাথা কমে যায় ও মলদ্বার স্বাভাবিক হয়, এনাল ফিসারের ঘা শুকিয়ে যায়। এনাল ফিসারের অপারেশন করলে ৯০% ভাগের বেশি রুগী সম্পূর্ণ ভাল হয়ে যায়। সকল অপারেশনের কিছু ঝুঁকি থাকে, কদাচিৎ এই অপারেশনের পর বাতাস বা তরল মল ধরে রাখা কষ্ট হতে পারে। আপনার কলোরেকটাল সার্জন এসব ঝুঁকির ব্যাপারে আপনার সাথে আলাপ করবেন এবং আপনার জন্য যথার্থ চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন
অপারেশনের পর ভাল হতে কতদিন লাগবে?
এনাল ফিসারের চিকিৎশার ক্ষেত্রে এটা মনে রাখতে হবে যে ঔষধ বা অপারেশন যাই হোক না কেন পুরোপুরি সুস্থ হতে ৬-১০ সপ্তাহ লাগতে পারে। অপারেশনের পর ব্যাথা এবং রক্তপাত হ্রাস পায়, এরপরেও মল স্বাভাবিক রাখা, শাকসবজি, সালাদ ও পানি বেশি খাবার অভ্যাস রাখতে হবে। ক্রমাগত শক্ত বা তরল মলত্যাগ বা পায়ূ পেশী টাইট হয়ে থাকলে, ঘা শুঁকাতে বিলম্ব হতে পারে। কিন্তু অপারেশনের ২-৩ দিন পরেই কাজে যোগ দিতে পারে। অপারেশনের পরে মলত্যাগে কোন সমস্যা থাকেনা বা তরল খাবার খেতে হয়না। এনাল ফিসারের যে অপারেশন করা হয় তাতে সিজ বাথ বা গরম পানিতে বসতে হয়না বা ড্রেসিং-এর দরকার নেই এবং সেলাই কাটার কোন ঝামেলা থাকেনা।
এনাল ফিসার থেকে কি ক্যান্সার হতে পারে?
এনাল ফিসার থেকে কখনই ক্যান্সার হতে পারে না। কিন্তু যদি ক্রমাগত ব্যাথা থাকে তাহলে রুগীকে সাবধানতার সাথে পরীক্ষা/ মূল্যায়ন করতে হবে কারন এ ক্ষেত্রে ব্যাথার অন্য কারন থাকতে পারে। এনাল ফিসার যদি ভালও হয়ে যায়, আপনার কলোরেকটাল সার্জন আপনাকে আরও পরীক্ষা করতে পারে। যদি মলদ্বার দিয়ে রক্ত যায় কলনস্কপি পরীক্ষা করতে হতে পারে।
কলোরেকটাল সার্জন কি বা কারা?
কোলন এবং রেকটাল সার্জন, বৃহদান্ত্র, মলদ্বার এবং পায়ূপথের রোগের অপারেশন এবং ঔষধের মাধ্যমে চিকিত্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। তারা এই রোগের চিকিত্সার উন্নত অস্ত্রোপচারের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে, পাশাপাশি সাধারণ অপারেশনের প্রশিক্ষণও সম্পন্ন করেছে। তারা বৃহদান্ত্র, মলদ্বার এবং পায়ূপথের সাধারণ ও ক্যান্সার রোগের চিকিত্সার ক্ষেত্রে সুপরিচিত এবং সুদক্ষ। কোলন এবং রেকটাল সার্জন বৃহদান্ত্র, মলদ্বার ক্যান্সার রোগের স্ক্রীনিং পরীক্ষা করেন এবং বৃহদান্ত্র, মলদ্বার এবং পায়ূপথের যাবতীয় অপারেশন/শল্যচিকিত্সার চিকিত্সা করেন, যদি তা প্রয়োজন হয়।
ডাঃ সৈয়দ মোহাম্মদ শমশের নাহিদ
ডাঃ সৈয়দ মোহাম্মাদ শমশের নাহিদ, ২০০২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হতে এম বি বি এস পাস করেন, ইন্টার্ন সমাপ্ত করে এদেশের স্বনামধন্য কলোরেক্টাল সার্জন প্রফেসর ডাঃ এ কে এম ফজলুল হকের সাথে কাজ শুরু করেন এবং দীর্ঘ সময় সুনাম ও বিশ্বস্ততার সহিত স্যারের সাথে কাজ করেন। ২০০৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। ২০০৬ সাল হতে ২০০৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকাল কলেজে জেনারাল সার্জারিতে প্রশিক্ষণ নেন। ২০১০ সালে জানুয়ারি মাসে এফ সি পি এস ডিগ্রী অর্জন করেন। ফেলোশিপ পরীক্ষা পাশের পর হতে ডাঃ সৈয়দ মোহাম্মাদ শমশের নাহিদ শুধুমাত্র কলোরেক্টাল সার্জারি বিষয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন। ২০১৩ সালে থাইল্যান্ড, ব্যাংককের এন চি আই (National Cancer Institute, Bangkok, Thailand) ক্যান্সার হাসপাতালে স্তন সার্জারির উপর প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৪ সালে আমেরিকান সোসাইটি অফ কলন অ্যান্ড রেকটাল সার্জনস (ASCRS) এর আন্তর্জাতিক বৃত্তি নিয়ে আমেরিকা গমন করেন এবং আমেরিকার বিখ্যাত মেয়ো ক্লিনিক(Mayo Clinic, Rochester, Minnesota), ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক (Cleveland clinic, Ohio) ক্যান্সার চিকিতসার জন্য বিখ্যাত এম ডি এন্ডারসন(M D Anderson, Houston Texas) হাসপাতালে প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৫ সালে আমেরিকান সোসাইটি অফ কলন অ্যান্ড রেকটাল সার্জনস ডাঃ সৈয়দ মোহাম্মাদ শমশের নাহিদকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ (FASCRS) প্রদান করে যা, বাংলাদেশে প্রথম। ২০১৭ সালে ডাঃ সৈয়দ মোহাম্মাদ শমশের নাহিদ “টাটা মেমরিয়াল হাসপাতাল”, মুম্বাই ইন্ডিয়াতে বৃহদান্ত্র ও মলদ্বার ক্যান্সার অপারেশনের উপর প্রশিক্ষণ নেন এবং জার্মানির বার্লিনে(Karl Storz Training certer, Berlin) ফিসটুলা রোগের উপর প্রশিক্ষন নেন। ২০১৭ সালে ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ কলন প্রকটলজি এর সদস্য হন। এছাড়াও তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সেমিনারে এ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং এবিষয়ে তার ৭টি প্রকাশনা রয়েছে।
Thank you
Good Post
আমি গত ৩০/০৭/২০২২ তারিখে অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে এনাল ফিসার অপারেশন করিয়েছি। কিন্তু একই যায়গায় আবার ফিসার দেখা দিয়েছে।দিনে তিনবার সিজবাথ নিচ্ছি। এখন আমার করনীয় কি?যদি বলতেন উপকৃত হতাম।
আমার বয়স ১৮।
Operation fees koto?
লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে এ্যানাল ফিসারের অপারেশন করলে কত টাকা খরচ পড়তে পারে, দয়া করে জানাবেন।