ইকোকার্ডিওগ্রাফি (Echocardiography) পরীক্ষা কি ও কেন করা হয়
ইকোকার্ডিওগ্রাফি (Echocardiography) কার্ডিওলজির একটা নন ইনভেসিভ পরীক্ষা। স্বল্প খরচে এ পরীক্ষাটি করানো যায়। এ পরীক্ষাটি করতে একটা ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিন এবং একজন কার্ডিওলজিষ্ট প্রয়োজন হয়।
এই পরীক্ষাটির মাধ্যমে আমরা হৃদরোগ বা হৃৎপিণ্ডের (ইংরেজিতে যেটাকে বলা হয় হার্ট) অবস্থা নির্ণয় করতে পারি। হার্টের অবস্থা বলতে হার্টের কোন স্ট্রাকচারাল বা ফাংশনাল অ্যাবনরমালিটি আছে কিনা, তা নির্ণয় করা হয়। আরো পরিষ্কার করে বলতে গেলে হার্টের কোন জন্মগত অসুখ বা ছিদ্র আছে কিনা, রক্ত চলাচল স্বাভাবিক আছে কিনা, হার্ট ঠিকমতো কাজ করছে কিনা, হার্টের বাইরে যে আবরণ থাকে (যেটাকে বলা হয় পেরিকার্ডিয়াম) তাতে কোন সমস্যা আছে কিনা, ফুসফুসের কোন অসুখের জন্য হার্টের কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা ইত্যাদি নির্ধারণ করা হয়।
ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষাটি কেন করানো হয়?
- ইকোকার্ডিওগ্রাফি যেকোনো বয়সে করা যায়।
- জন্মের পর পর বাচ্চাদের জন্মগত কোন হার্টের অসুখ আছে কিনা বা জন্মগত হার্টের কোন ছিদ্র আছে কিনা দেখা হয়।
- বড়দের ক্ষেত্রে হার্টের ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ
- ভাল্ভোলার হার্ট ডিজিজ আছে কিনা।
- হার্টের সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক ফাংশন ঠিক আছে কিনা।
- ফুসফুসের রক্তনালীর প্রেসার নির্ধারণ করার জন্য।
- একিউট রিউম্যাটিক ফিভার এবং ক্রনিক রিউম্যাটিক হার্ট ডিজিট আছে কিনা।
- পেরিকার্ডিয়াম এর অবস্থা নির্ধারণ করার জন্য, কোন পেরিকার্ডিয়াল ইফিউশন আছে কিনা দেখা হয়।
- বিভিন্ন সিস্টেমিক ডিজিজ যেমন বাত ব্যথা, কিডনির সমস্যা, লিভারের সমস্যা, ইত্যাদি কারণে হার্টের কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা দেখা হয়।
- স্ট্রোকের রোগীর ক্ষেত্রে স্ট্রোকের কারণ নির্ধারণের জন্য।
এই সমস্ত প্রয়োজনে ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষাটি করা হয়।
ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষাটি কে করবেন?
ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষাটি করবেন একজন কার্ডিওলজিষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি করার জন্য কার্ডিওলজি বিষয়ের উপর পোষ্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি সম্পন্ন করা থাকতে হবে এবং ইকোকার্ডিওগ্রাফির উপর প্রশিক্ষণসহ দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
কার্ডিলজি বিষয়ের উপর যথেষ্ট জ্ঞান থাকা প্রয়োজন কারণ এই ইকোকার্ডিওগ্রাফির উপর ভিত্তি করে হার্টের বা হৃদরোগের চিকিৎসা অনেকটা নির্ভর করে। সেজন্য একজন কার্ডিওলজিষ্ট ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষাটি করবেন। এই ইকোকার্ডিওগ্রাফি করার জন্য কার্ডিওলজিষ্টকে প্রশিক্ষণ নিতে হয় ইকোকার্ডিওগ্রাফির উপর। ইকো রিপোর্টিং এর উপরেও প্রশিক্ষণ নিতে হয় কিভাবে রিপোর্ট লিখতে হয়।
কখন ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষাটা রোগীকে করাবেন?
ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষাটি এখন খুব সহজেই বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং সরকারি হাসপাতাল থেকে করা যায়। যাদের হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে, ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে, বাত ব্যথার সমস্যা রয়েছে, কিডনির সমস্যা রয়েছে এবং যাদের কোন অপারেশনের প্রয়োজন হবে- অপারেশনের পূর্বে হার্টের অবস্থা নির্ণয়ের জন্য ইকোকার্ডিওগ্রাফি দরকার হয়।
অপারেশনের আগে ইকোকার্ডিওগ্রাফি কেন লাগে?
অপারেশন মানে হচ্ছে, এখানে কিছুটা ঝুঁকি থাকতে পারে। যে কোন অপারেশনের পূর্বে, বিশেষ করে বড় অপারেশনগুলোর ক্ষেত্রে রোগীর কোন হৃদরোগ আছে কিনা এবং হার্টের কার্যক্রম ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য ইকোকার্ডিওগ্রাফি করা হয়।
শ্বাস কষ্টের রোগীকে ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষা করাবেন কিনা?
যে কোন শ্বাস কষ্টের রোগীকে ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষা করানো দরকার। কোন রোগীর ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা বা সিওপিডি যদি ডায়াগনোসিস হয়ে থাকে, অবশ্যই তার একটা ইকো করানো দরকার হয় কেননা অ্যাজমা বা সিওপিডি হিসেবে যাকে আমরা চিকিৎসা করি তার অ্যাজমা বা সিওপিডি থেকে হার্টের ডান পাশের প্রেশারটা বেড়ে যেতে পারে অথবা অ্যাজমা বা সিওপিডি না হয়ে ইশকেমিক বা ডাইলেটেড কার্ডিওমায়োপ্যাথির মত মারাত্মক রোগ থাকতে পারে সুতরাং যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তাদের একটা ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষা করানো উচিত।
ডাঃ সাইফুল ইসলাম টিপু চৌধুরী
ডা. সাইফুল ইসলাম টিপু চৌধুরী এমবিবিএস পাশ করেন বগুড়া মেডিকেল কলেজ থেকে। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে হৃদরোগ বিষয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রি ডক্টর অব মেডিসিন (এমডি) ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের এই কর্মকর্তা ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশাল কার্ডিওলজিতে বিভিন্ন উচ্চতর ট্রেনিং এর পাশাপাশি হৃদরোগ নির্নয়ে অস্ট্রিয়া থেকে ডিপ্লোমা ইন ইকোকার্ডিওগ্রাফি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০২২ সালে আমেরিকান কলেজ অব্ ফিজিশিয়ান থেকে "ফিজিশিয়ান অব্ দ্যা মানথ্" অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন এবং ফেলোশিপ ডিগ্রি "এফএসিপি" অর্জন করেন। তিনি ২০২৩ সালে ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব্ কার্ডিওলজি থেকে ফেলোশিপ ডিগ্রি "এফইএসসি" অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি কনসালটেন্ট কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি হৃদরোগ, বাতজ্বর, উচ্চ রক্তচাপ ও মেডিসিনের রোগী যত্ন সহকারে চিকিৎসার পাশাপাশি একজন গবেষক হিসেবেও বেশ পরিচিত। তাঁর গবেষণাসমৃদ্ধ প্রায় ৪০টি প্রবন্ধ দেশী ও বিদেশী জার্নালে প্রকাশিত হয়। তিনি Clinical Cardiology Update, London, Journal of Clinical Cardiology, USA; Journal of International Case Report এবং Hypertension and Co-morbidities জার্নাল এর এডিটরিয়াল বোর্ড মেম্বার হিসেবে কাজ করছেন।