মাতৃদুগ্ধপানকে সফল করার কার্যকরী সকল পদ্ধতি | ডাঃ মনির উল্লাহ

শিশু বান্ধব হাসপাতাল কর্মসূচী একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ যেটি ১৯৯৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফ এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে শুরু হয়। এই কর্মসূচীর ২টি মূল বিষয় হলঃ
– হাসপাতালে মাতৃদুগ্ধপান সহায়ক পরিবেশ তৈরী করা
– যে সব হাসপাতালে উপরোক্ত বিষয়ে সন্তোষজনক পরিবেশ তৈরী করতে সামর্থ হবে সে গুলোকে শিশু বান্ধব হাসপাতাল হিসেবে সার্টিফাইড করা।
বিশ্বে প্রতিদিন ৫৫০০ শিশু মারা যায় শুধুমাত্র মায়ের দুধ না খাওয়ানোর কারণে।
আমরা যদি ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি-৩ অর্জন করতে চাই তাহলে ৫ বছরের নিচের শিশু মৃত্যু হার যা বর্তমানে ৪৫/হাজার সেটাকে ২৫/হাজারে নামাতে হবে। জন্মের প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্র মায়ের দুধ এবং ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবার নিশ্চিত করতে পারি তাহলে ৩১ ভাগ শিশু মৃত্যু হার কমানো যায় এবং আমরা সহজেই এসডিজি অর্জন করতে পারি।
শিশুর জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই কেননা যেসব শিশুকে ফর্মূলা খাওয়া হয় তাদের ঘন ঘন নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, এলার্জি, ইত্যাদির মুখোমুখি হয় এবং ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এমনকি ক্যান্সারের ঝুকি বাড়ে। শিশুকে যদি মায়ের দুধ খাওয়ানো হয় তবে মায়ের, শিশুর এবং দেশের অনেক উপকার সাধিত হয় যা আজ অনশ্বিকার্য।
মাতৃদুগ্ধপানকে যদি আমরা সফল করতে চাই তাহলে নিম্নোক্ত ১০টি বিষয় আমাদের অনুসরণ করতে হবেঃ
- একটা লিখিত নীতিমালা থাকতে হবে যা সম্পর্কে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীরা নিয়মিত ওয়াকিবহাল থাকবে।
- সেবা প্রদানকারীদের এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
- প্রসূতী মায়েদের কে মাতৃদুগ্ধদানের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝাতে হবে।
- জন্মের আধা ঘন্টার মধ্যে যেন মায়ের দুধ খাওয়ানো শুরু করা যায় সেজন্য মাকে সহযোগিতা করতে হবে।
- মাকে দেখিয়ে দিতে হবে কীভাবে মাতৃদুগ্ধপান শুরু করতে হবে এবং সেটা কিভাবে বজায় রাখা যায় এমনকি শিশু মা থেকে আলাদা থাকলেও।
- মেডিকেল প্রয়োজন ছাড়া শিশুকে মায়ের দুধ ছাড়া ফর্মূলা দেয়া যাবে না।
- শিশুকে সার্বক্ষনিক মায়ের সাথেই বা একই রুমে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
- শিশু যখনই চাই তাকে মায়ের দুধ প্রদান করতে হবে।
- শিশুকে কোন ফিডার দেয়া যাবে না।
- মাতৃদুগ্ধপান সহায়তাকারী গ্রুপ তৈরী করতে হবে যারা হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়ার পর মাকে প্রয়োজণীয় সহায়তা বজায় রাখবে।এই জন্য আমাদের দরকার দক্ষ জনশক্তি যারা জ্ঞান অর্জন ও দক্ষতার মধ্য দিয়ে মায়েদেরকে মাতৃদুগ্ধপান সম্পর্কে উদ্ভুদ্ধ করবেন এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবেন।
মাকে যদি আমরা মাতৃদুগ্ধপান সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী করতে চাই তাহলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবেঃ-
- মায়ের সাথে ঘনিষ্ট হয়ে একই লেভেলে বসতে হবে।
- মায়ের দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে।
- মাকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে এবং কোন তাড়াহুড়া করা যাবে না।
- মায়ের হাতে/কাধে হাত রেখে (সেটা সমাজ ও পারিপার্শ্বিক বিবেচনায় শিষ্টাচার বজায় থাকবে) কথা বলতে হবে।
- হ্যাঁ বা না দিয়ে উত্তর দেয়া যায় এরূপ প্রশ্ন না করে শিশু বা মায়ের সম্পর্কে সম্যক ধারনা পাওয়া যায় সেরকম প্রশ্ন করতে হবে।
- মাকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে।
- মায়ের প্রতি সহনশীল হতে হবে।
- মা যেটা মনে করে বা অনুভব করে সেটার প্রতি সংবেদনশীল হয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে হবে।
- মার যেটা সঠিক সেটাকে উৎসাহিত ও প্রশংসা করতে হবে।
- মাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে এবং তাকে ফলো-আপ ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে।
ফর্মূলা দুধ সম্পূর্ণ জীবানু মুক্ত নয় সর্বোপরী এটি শিশুর বুদ্ধি বিকাশে সহায়তা করে না। প্রসূতী মায়েদেরকে নিয়ে গ্রুপ ভিত্তিক আলোচনার আয়োজন করতে হবে যেখানে মাতৃদুগ্ধপান সম্পর্কে পজিটিভ ধারণা রাখে সে সমস্ত মায়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা এবং পুতুল দিয়ে দুধ পানের পজিশন ও সংযুক্তি দেখিয়ে দেয়া।
ডেলিভারীর সময় যে সমস্ত আচরণ/অভ্যাস ব্রেস্ট ফিডিং এর সফলতা বাড়াতে পারেঃ-
- মায়ের সাথে একজন সঙ্গী রাখা যে স্বাস্থ্যকর্মী বা রোগীর আত্মীয় হতে পারে
- ডেলিভারীর সময় অপ্রয়োজনীয় ব্যথানাশক ঔষুধ বা অস্ত্রোপাচার পরিহার করা।
- জন্মের পর পরই শিশুকে মায়ের স্কিন টু স্ক্রিন সংসপর্শে দিয়ে দেয়া।
- শিশুকে মায়ের সাথে একই রুমে রাখার ব্যবস্থা করা ।
- শিশুকে ঘন ঘন যখন চায় দুধ খাওয়ানো
- মাকে আশ্বস্ত করা যে বেশীর ভাগ মায়েরা কোন সমস্যা ছাড়াই শিশুকে দুধ পান করাতে পারেন যা ব্রেস্ট এর আকার আকৃতির উপর নির্ভর করে না। যেমন বড় কানে বেশী শোনা যায় না।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মায়েদের কে সনাক্ত করনঃ
- যে মা তার আগের বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে সমস্যায় পড়েছিল এবং ফর্মূলা দুধ খাওয়াইয়াছেন।
- ঘরের বাইরে কাজ করতে যাওয়া লাগে।
- পারিবারিক সমস্যা বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অসহযোগিতা।
- মা বিসন্নতায় ভুগছেন।
- মা সামাজিক ভাবে আলাদা।
- অল্প বয়সী বা বিধবা মা ।
- শিশুকে দত্তক দেয়ার ইচ্ছা আছে এমন মা।
- আগে ব্রেস্টে আঘাত প্রাপ্ত বা অপারেশন করা হয়েছে।
- নিয়মিত বিশেষ ঔষুধ খেতে হয় বা দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত।
- জমজ বা অপরিণত বা অসুস্থ শিশু ।
- যার HIV পজিটিভ।
বাংলাদেশে ব্রেস্ট ফিডিং কে সুরক্ষা দেয়া এবং পাশাপাশি ফর্মূলা মিল্ককে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে BMS-ACT-2013 বিদ্যমান রয়েছে:
কেউ এই আইনের বিধিবিধান লঙ্ঘন করলে ৩ বছরের জেল বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। কেউ যদি অপরাধের, পুনরাবৃত্তি করে তাহলে জেল/জরিমানা দ্বীগুণ হবে। ফর্মূলা খেয়ে যদি কোন শিশু অসুস্থ হয় বা মারা যায় তাহলে ১০ বছরের জেল বা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।
ডেলিভারীর সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অনুশীলনের মধ্য দিয়ে জন্মের পর পরই মাতৃদুগ্ধপানকে সহায়তা করতে পারিঃ-
- যতটা সম্ভব ব্যাথানাশক ঔষুধ না খাওয়ানো।
- হালকা নরম ও তরল খাবার খেতে দেয়া।
- ডেলিভারীর সময় হালকা হাটাহাটি করতে দেয়া।
- প্রয়োজনীয় সিজার থেকে বিরত থাকা।
- যত শীঘ্রই সম্ভভ নবজাতককে মায়ের বুকে দিয়ে দেয়া।
- প্রথম মায়ের দুধ খাওয়ানোতে সহযোগিতা করা।
- মাকে হালকা মেসেজ এবং কুসুম গরম পানি খেতে দেয়া।
- শান্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা ও মাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে আশ্বস্ত করা।
- ডেলিভারীর সময় শারীরিক পজিশন মায়ের পছন্দ অনুযায়ী হতে দেয়া।
- শিশুকে মায়ের একই রুমে রাখার ব্যবস্থা করা।
- মাকে পজিশন ও সংযুক্তি দেখিয়ে দেয়া।
- শিশু যখই চায় তাকে দুধ খাওয়াতে মাকে উৎসাহিত করা।
১টি শিশু সাধারণত দৈনিক ৮-১২ বার দুধ পান করে। শিশু যদি দৈনিক ১২ বারের বেশি এবং প্রতিবার ১০ মিনিটের কম বা ৪০ মিনিটের বেশী সময় ধরে দুধ পান করে তখন ধরে নিতে হবে দুধ পান করানোর পজিশন বা সংযুক্তিগত ক্রুটি রয়েছে। নিপলে যদি ক্ষত হয় তখন ও ধরে নিতে হবে সংযুক্তি সঠিক হচ্ছে না।
ঘুমন্ত শিশুকে জাগানোর উপায়ঃ-
- অতিরিক্ত কাপড় বা কম্বল সরিয়ে ফেলা।
- শিশুকে অধিকতর সোজা অবস্থায় দুধ খাওয়ানো।
- শিশুর সাথে কথা বলা বা গায়ে হালকা মেসেজ করা।
- আধা ঘন্টা পর আবার চেষ্টা করা।
- তবে শিশুকে আঘাত করা যাবে না।
শিশু কান্না করলে কি করবেনঃ-
শিশুটি কেন কাঁদছে সেটা বের করতে হবে। যেমনঃ ক্ষিদে, ব্যথা, একাকিত্ব, ক্লান্ত, পটি বা প্রসাবের পর ও শিশু কান্না করতে পারে। তাই কারণ বুঝে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে শিশু শান্ত হবে এটাই আশা করা যায়।
কখন মায়েরা মনে করে যে শিশু পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে না:
- শিশু প্রায় কান্না করে।
- শিশু পর্যাপ্ত ঘুমায় না।
- শিশু মায়ের দুধে শান্ত হচ্ছে না এবং দুধ খাওয়ানো যাচ্ছে না।
- শিশু নিজের আঙ্গুল /হাত চুষে।
- বেশী/কম ওজনের শিশু।
- শিশু খুব ঘন ঘন বা বেশীক্ষন ধরে দুধ খেতে চায় ।
- মা মনে করে যে তার দুধ বেশী পাতলা।
- মা যখন হাতে দুধ বের করার চেষ্টা করে তখন যদি দুধ না আসে।
- দুধ খাওয়ানোর আগে ব্রেস্ট পূর্ণ বা খাওয়ানোর পর খালি মনে না হয়।
- এক সাইড থেকে খাওয়ানোর সময় অন্য সাইড থেকে দুধ ক্ষরন না হলে।
- শিশু দুধের পরিপূরক হিসাবে অন্য কিছু নিলে উপরোক্ত লক্ষন গুলো দিয়ে সুনিশ্চিত ভাবে বলা যায় না যে শিশু দুধ পাচ্ছে না তবে শিশু যদি দৈনিক ৬ বার তার বেশী প্রসব করে এবং ৩-৮ বার পটি করে তাহলে ধরে নেয়া যায় যে শিশু পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে।
কম দুধ তৈরীর কারণঃ-
- বারে বারে দুধ না দেয়া।
- সিডিউলের বাইরে দুধ না খাওয়ানো।
- খুব অল্প সময় ধরে দুধ খাওয়ানো।
- কম চুষা।
- দরিদ্র সংযুক্তি।
- সাইকোলেজিক্যালঃ মায়ের আত্মবিশ্বাসের অভাব, মা ক্লান্ত, জর্জরিত, চিন্তিত, শারিরীক/মানসিক চাপ।
দুধ কম বের হওয়ার কারণঃ - দরিদ্র সংযুক্তি।
- কম সংখ্যক বা অল্প সময়ে তাড়াহুড়া করে দুধ খাওয়ানো।
- দ্রুত এক সাইড থেকে অন্য সাইডে নেয়া।
- শিশু অসুস্থ বা অপরিণত।
- দুধ উৎপাদন ও দুধ বের হওয়া এর মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
মায়ের দুধ বাড়ানোর ব্যায়ামঃ
মাকে ব্যাখা করে বলা যে দুধ খাওয়ানোর সময় যে ঘটনাগুলো স্বাভাবিক ভাবে ঘটতে পারেঃ-
- শিশু লম্বা সময় ধরে খেতে পারে খাওয়ার মাঝখানে বিরতি দিতে পারে তাই তাড়াহুড়া না করে প্রয়োজনে বেশীক্ষন ধরে খাওয়ানো।
- দুধ খাওয়ার সময় ঢোক গিলার শব্দ বা গলায় খাবার আটকে গেলে যেমনটা হয় সে রকম হতে পারে।
- শিশু ঘুমন্ত বা খুব অস্তির হলে দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা না করে শিশুকে বুকে রাখা যেতে পারে।
- দুধ খাওয়ানোর সময় শান্ত পরিবেশ, কম আলো হলে ভাল হয়।
- মা ২ বা অধিক শিশুকে চাইলে আত্ম বিশ্বাসের সহিত দুধ খাওয়াতে পারে।
- শ্বাস কষ্ট থাকলে অল্প করে বারে বারে খাওয়ানো ভাল।
কৃত্রিমভাবে দুধ বের করার নিয়মঃ-
- হাতে চেপে বিশেষ পদ্ধতিতে
- ব্রেস্ট পাম্পের মাধ্যমে বের করা দুধ খাওয়ানোর নিয়ম :
- কাপে খাওয়ানো
- পুনরায় মাতৃদুগ্ধপান:
- ব্রেস্ট ফিডিং সাপ্লিমেন্ট
- দুধের বোঁটায় বিশেষ ব্যায়াম
- ঘন ঘন দুধ চুষানো
- দুধ খাওয়ানোর সময় ব্রেস্ট এর উপরিভাগ থেকে ফোটায় ফোটায় দুধ ফেলা (ড্রপ এন্ড ড্রিপ মেথড) ।
মিল্ক ইনজুরীঃ ১ বছরের ও অধিক সময় শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ালে অর্থাৎ ৬ মাস থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক সুষম খাদ্য না দিলে শশিুর শরীরে আইরন এবং ভিটামিন সি এর ঘাটতি দেখা দেয় যাকে আমরা মিল্ক ইনজুরী বলে থাকি।
মায়ের ব্রেস্টের কিছু সাধারণ সমস্যার এর সমাধান :
দুধের বোটা চ্যাপটা হলে করণীয়:
ব্রেস্ট প্রবৃত্তি : ব্রেস্ট শক্ত ও চকচকে দেখাবে।
করণীয়:
- খুব বেশী টাইট না এ ধরনের ব্রা পরিধান।
- তয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে হালকা গরম ছেক দিন।
- হাতে দুধ বের করুন।
- বাথ্যানাশক ঔষধ যেমন: প্যারাসিটামল/আইবোপ্রোফেন (ডাঃ এর পরামর্শে) খাওয়া যেতে পারে।
ব্লক ডাক্ট : অনেক সময় দুধের নালী ব্লক হয়ে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় চাকার মত মনে হয় যেখানে চাপ পড়লে ব্যথা অনুভত হবে এবং কিছুটা লাল হয়ে যাবে। তবে থাকবে জ্বর না।
করণীয়: বিশেষ ব্যায়াম। ব্যায়াম পদ্ধতি দেখতে এই ভিডিওটি দেখুন।
ব্রেস্টে প্রদাহ (Mastitis): এখানে সাথে জ্বর থাকবে।
করণীয়:
- দুগ্ধপান চালিয়ে যাবে
- ব্যাথা নাশক ঔষধ
- এ্যান্টিবায়োটিক
ব্রেস্টে ফোডা (Abscess) :
দুগ্ধপান চালিয়ে যাবে তবে ফোডা অপারেশনের জায়গায় যদি নিপলের কাছাকাছি হয় তখন ২-৩ দিন বিরতির পর দুগ্ধপান করানো যাবে।
- যে সাইড ভাল আছে সে সাইডে দুগ্ধপান চালিয়ে যাবে।
- ব্রেস্টে প্রদাহের যদি ভাল ব্যবস্থা নেয়া হয় তবে ব্রেস্টে ফোডা হওয়া প্রতিরোধ করা যায়।
স্তনের বোঁটায় ক্ষত :
- দুগ্ধপান চালিয়ে যাবে।
- মাকে পজিশন ও সংযুক্তি দেখিয়ে দেয়া।
- ফাঙ্গাল ইনফেকশন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে Micoral Gel এ জাতীয় মলম (প্রয়োজনে শিশুর মুখের ভিতর ও লাগাতে হবে)।
- মাকে আশ্বস্থ করা।
- শিশু জিহ্বা লাগানো থাকলে (Tongue Tie) শৈল্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।
- প্রয়োজনে হাতে দুধ বের করবে।
- দৈনিক ১ বার বিশুদ্ধ পানিতে পরিষ্কার করবে এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখবে।
কর্মজীবি মহিলাদের ক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধ পানকে সুরক্ষা কিভাবে দেয়া যেতে পারে:
- মাতৃদুগ্ধপান করালে শিশু কম অসুস্থ হবে এবং মায়ের কর্মস্থলে অনুপস্থিতি কমে যাবে।
- রাতে সহজেই শিশুকে ব্রেস্ট ফিডিং করানো যায় যার মাধ্যমে বা বেশী ঘুমানোর সুযোগ পায়।
- শিশুর সাথে নিবিড় হওয়ার সুযোগ তৈরী হয়।
- দুধ খাওয়ানোর সময় বা বিশ্রামের সুযোগ পায়।
- শিশুর সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক তৈরী হয়।
- ৬ মাস বয়সের পর মায়ের দুধের পাশাপাশি ঘরের তৈরী পুষ্টিকর পরিপূরক খাবার খাওয়াতে হবে।
হাসপাতাল থেকে ছুটির পর নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা মাকে অব্যাহত সহযোগিতা প্রদান :
- অভিজ্ঞ মা যাদের মাতৃদুগ্ধদানে সফল ইতিহাস আছে।
- পরিবার ও পরিচিত জন।
- মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য কর্মী।
মাঠ পর্যায়ে পরিচালিত সরকারের স্বাস্থ্য বিষয়ক অন্যান্য কর্মসূচীর সাথে মাতৃদুগ্ধপান সহায়তা কর্মসূচীকে সমন্বয় করা যেতে পারে।
একটি হাসপাতালকে শিশু বান্ধব হিসেবে গড়ে তুলার উপায়ঃ-
- মাতৃদুগ্ধ পানের যে ১০টি ধারা রয়েছে সেগুলো অনুশীলন ও বাস্তবায়ন ।
- দুধ কোম্পানী থেকে কোন ধরনের সহায়তা না নেয়া।
- মাতৃদুগ্ধপানকে সর্বোতভাবে সহায়তা করা।
- উক্ত কর্মসূচীর যে আত্মসমালোচনা ফরম রয়েছে তা নিয়মিত পর্যালোচনা করা।
- দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি দ্বারা মূল্যায়নের ব্যবস্থা নেয়া (External Assessment)।
- দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি দ্বারা মূল্যায়ন সন্তোষ জনক হলে বা পরিপোর্ট আকারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের কাছে পাঠানো এবং তাদের সম্মতিক্রমে উক্ত হাসপাতালের শিশু বান্ধব হাসপাতাল উপাধিতে ভূীষত করা এবং প্রতি ৩ বছর পর পর পুনঃ মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা।
- উক্ত কর্মসূচীর স্থায়িত বজায় রাখতে উদ্যোগী হওয়া, বাজেট পর্যালোচনা ও বাস্তবায়ন, মাতৃদুগ্ধপান সম্পর্কিত জ্ঞান, দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসকে জাগ্রত রাখা।

ডাঃ মনির উল্লাহ
নবজাতক ও শিশু-কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মনির উল্লাহ পার্কভিউ হসপিটালে কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়মিত রোগী দেখছেন। বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের এই কর্মকর্তা নবজাতক, শিশু ও কিশোর বয়সের মেডিকেল সমস্যার চিকিৎসা পরামর্শ দেয়া ছাড়াও শিশুর পুষ্টি, ব্রেস্ট ফিডিং ও সরকারি বেসরকারি টিকাদানের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিচ্ছেন।