দৈহিক স্থূলতা কেড়ে নিচ্ছে শৈশব: মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আমাদের নতুন প্রজন্ম
সাত পেরিয়ে আট বছরে পরবে ঈশিতা (ছদ্মনাম)। এই বয়সী একটা বাচ্চা মেয়ের ওজন সর্বোচ্চ থাকার কথা ২৭ কিংবা ২৮ কেজি। কিন্তু এ বয়সেই ঈশিতার ওজন ৪২ কেজি। এই বয়সে ঈশিতার যেখানে দুরন্ত গতিতে ছুটে বেড়ানোর কথা, চঞ্চল ফড়িংয়ের মতো নেচে বেড়ানোর কথা সেখানে ঈশিতা একেবারেই চুপচাপ। স্কুল টিফিনে বন্ধুরা যেখান খেলা শুরু করে দেয়, ঈশিতা তখন বসে বসে দেখে। হাঁটতে গেলে পড়ে যায়, দুই থেকে তিন কদম হাঁটলেই হাঁপিয়ে ওঠে, ওভারব্রিজে উঠতে গেলেই বসে পরে সিঁড়ির ওপরে, নিজের পোশাক নিজে পরতে পারে না। তাকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই পরিবারের সবার।
ঈশিতার মায়ের অভিযোগ, সাধারণ খাবারে তার আগ্রহ নেই। স্কুলের টিফিনে তেলেভাজা খাবার ছাড়া খায় না; বার্গার, পোলাও, চিকেন ফ্রাই ছাড়া সাধারণ খাবার সে ছুঁয়েই দেখে না। মাঝে মাঝেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়, কিন্তু চিকিৎসকের একটাই কথা, আগে ওজন কমাতে হবে। কিন্তু ওর ওজন দিন দিন বেড়েই চলেছে।
বড় বড় শপিং মলে, ফাস্ট ফুড রেস্তোরাঁয়, স্কুলগুলোর সামনে এমনকি রাস্তায় নামলেই ইদানিং এরকম অতিরিক্ত ওজনের শিশু চোখে পড়ে। বিশেষ করে শহর এলাকায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থূলতায় আক্রান্ত শিশু কিশোর চোখে পড়ে অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বয়স ও শারীরিক কাঠামোর তুলনায় অতিমাত্রায় ওজনের (যা ওবেসিটি নামে পরিচিত) কারণে শিশুরা যেমন শৈশবের চঞ্চলতা হারাচ্ছে তেমনি শিশু বয়সেই ভুগছে এ সংক্রান্ত নানারকম অসুখে। তাদের ভবিষ্যত জীবন দাঁড়াচ্ছে মারাত্মক হুমকির মুখে।
আর অস্বাভাবিক এই শারীরিক অবস্থার জন্য বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন বাবা-মায়ের অসচেতনতা, শিশু খাবারে জাংক ফুডের আধিক্য, ভিডিও গেমস-কম্পিউটার বা টিভি দেখার মতো কায়িক পরিশ্রমবিহীন কাজে মগ্ন থাকা এবং শরীরচর্চার অভাবকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওবেসিটি বা স্থুলতা শিশুদের ভয়াবহভবে ঠেলে দিচ্ছে আজীবনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, হার্টের সমস্যা, চোখের সমস্যা, বাত ও হেপাটাইসিসসহ নানা ঝুঁকিতে পরছে শিশুরা। ইতোমধ্যেই বিষয়টিকে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন তারা।
২০১৩ সালে প্রথম বাংলাদেশে শহরাঞ্চলে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে স্থূলতার প্রকোপ এবং খাদ্যাভাস ও শারীরিক সক্রিয়তার ধরন শীর্ষক এক জরিপ করে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি)। সেখানে দেখা যায়, দেশের শহরাঞ্চলের ১৪ শতাংশ শিশু অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতায় ভুগছে। আর ঢাকায় এর সংখ্যা ২১ শতাংশ।
এখন বাচ্চারা কাঁদলেই আমরা চিপস, বিস্কুটের প্যাকেট হাতে ধরিয়ে দেই। এভাবেই আমরা শিশুদের অভ্যাস তৈরি করে ফেলি। পরবর্তীতে শিশুরা নিজেরাই এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।শহরে শিশুরা ফাস্টফুড যত খায় তত পরিশ্রম করে না। অতিরিক্ত চর্বি ও মেদ পোড়ানোর জন্য যতটা পরিশ্রম করা দরকার তারা সেই সুযোগ পায় না বা পেলেও পরিশ্রম করে না। এ কারণেও তাদের মধ্যে স্থূলতা বাড়ছে।
ওবেসিটি হল শরীরের এমন একটি অবস্থান যে অবস্থায় শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়। হিপোক্রেটিস বলেছেন স্থূলতা অবশ্যম্ভাবীভাবে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর দুর্যোগপূর্ণ পরিণতি বয়ে আনে। এ অবস্থায় শরীরে অতিরিক্ত স্নেহ বা চর্বিজাতীয় পদার্থ জমা হয় এবং স্বাস্থ্যের ওপর এর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে, ফলে আয়ু কমে যেতে পারে এবং একই সঙ্গে শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বডি মাস ইনডেক্স (বিএমাই) হল শরীরের উচ্চতা ও ওজনের আনুপাতিক হার, যা দিয়ে বোঝা যায় যে কোনো ব্যক্তি মাত্রাধিক ওজন (মরবিড ওবেসিটি) বিশিষ্ট কিনা।
স্থূলতা এমন একটা রোগ, যাকে বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে খাড়া করা যেতে পারে, তবে একে ঠেকানোও যেতে পারে।স্থূলতার কারণে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা থাকে। মূল সমস্যার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়, যেমন মেটাবলিক সিনড্রোম বা কার্ডিওভাসকুলার রোগ ও মধুমেহ বা ডায়াবেটিস রোগ, উচ্চরক্তচাপ, রক্তে বেশি কোলেস্টরল ও উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার অনুমান অতিওজন ও স্থূলতা খুব শিগগিরই হয়তো কমপুষ্টি (আন্ডার নিউট্রিশন) ও সংক্রামক ব্যাধির (খারাপ স্বাস্থ্যের জন্য যা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ) মতো প্রথাগত জনস্বাস্থ্য সমস্যার জায়গা নেবে। তার বিস্তার, খরচ ও স্বাস্থ্যে তার প্রভাবের কারণেই স্থূলতা হল একটা জনস্বাস্থ্য ও নীতি সম্পর্কিত সমস্যা।
২০১৫ থেকে পৃথিবীব্যাপী দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘সকলে মিলে অবেসিটি মোকাবিলা’।
শিশু বয়সের স্থূলতা
শিশুর বয়স ও লিঙ্গের সঙ্গে সুস্থ বডি মাস ইন্ডেক্স (বিএমআই) ক্রমবিন্যাস ওঠানামা করে। বিএমআইর ৯৫তম পার্সেন্টাইলের শিশুদের ও বয়ঃসন্ধিকালের স্থূলতার সংজ্ঞা ঠিক করা হয়। এ পার্সেন্টাইলগুলোর ভিত্তি হল ১৯৬৩ থেকে ১৯৯৪-এর মধ্যবর্তী সময় এবং স্থূলতার হারের সাম্প্রতিক বৃদ্ধির দ্বারা তা প্রভাবিত হয় না। একবিংশ শতাব্দীতে শিশু বয়সের স্থূলতা মহামারীর আকার নিয়েছে, উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্ব উভয় জায়গাতেই এ হার বেড়েছে। কানাডার কিশোরদের মধ্যে স্থূলতার হার ১৯৮০-এর দশকে ১১% থেকে ১৯৯০-এর দশকে ৩০%-এর ওপর বেড়ে গেছে। এই একই সময়কালে ব্রাজিলের শিশুদের মধ্যে এই হার ৪ থেকে বেড়ে ১৪% হয়েছে।
প্রাপ্তবয়স্কদের স্থূলতার পাশাপাশি শিশু বয়সের স্থূলতার হার বাড়ার সঙ্গে বহু বিষয় জড়িয়ে আছে। সাধারণ খাদ্য বদল ও শারীরিক কসরত কমে যাওয়াকেই সাম্প্রতিককালে এই হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে দুটি মূল কারণ বলে মনে করা হয়। কারণ শিশু বয়সের স্থূলতা বড় বয়সেও প্রায়ই থেকে যায় অসংখ্য কঠিন ব্যাধিকে সঙ্গী করে। যেসব শিশু ভীষণ মোটা প্রায়ই তাদের পরীক্ষা করে দেখা গেছে এদের হাইপারটেনশন (উচ্চরক্তচাপ), ডায়াবেটিস (মধুমেহ), হাইপারলিপিডেমিয়া ও চর্বিযুক্ত লিভার থাকে। এসব শিশুদের চিকিৎসা হল প্রাথমিকভাবে লাইফস্টাইল বা জীবনধারণের ধরনে হস্তক্ষেপ ও আচার-আচরণ প্রণালি পরিবর্তন।
বিগত ৪০ বছরে বিশ্বে ৩০০ শতভাগ স্থূলতা বেড়েছে। বিশ্বে এখন তাহলে তার হার ১৭% ও অতিরিক্ত ওজনের হার ৩৪%। বাংলাদেশে এই হার যথাক্রমে ১৬ এবং ২৮ যা উন্নত বিশ্বের তুলনায় কোন অংশে কম নয়। আমরা যদি পারসেন্টাইলে হিসাব করি তাহলে ৫ পারসেন্টাইলের নিতে হলে কম ওজনের শিশু, ৫-৮৫পারসেন্টাইলের মধ্যে হলে স্বাভাবিক ওজন, ৮৫-৯৫পারসেন্টাইলের মধ্যে হলে অতিরিক্ত জন, ৯৫পার্সেন্টাইলের বেশি হলে স্থূলতা বা ওভেসিটি। স্থূলতা যদি ৯৫পার্সেন্টাইলের ১২০ % এর মধ্যে থাকে, তাকে ক্লাস ওয়ান, ১৪০% এর কম হলে ক্লাস টু এবং ১৪০% এর বেশি হলে ক্লাস থ্রি বা মরবিড ওভেসিটি বা স্থুলতা বলা হয়।
ভ্রুন তৈরি হওয়া থেকে ১০০০ দিন অর্থাৎ প্রথম দুই বছর বয়স পর্যন্ত এই সময়টাতে আমরা স্থূলতা বা অভেসিটিকে কার্যকর ভাবে প্রতিরোধ করতে পারি ( Modifiable period of obesity)।
স্থূলতার ঝুকির কারণসমূহ :
- পিতা-মাতার স্থূলতা
- জন্মের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বা কম হলে
- মায়ের ধূমপানের অভ্যাস
- গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকের চেয়ে যদি ওজন বৃদ্ধি পায়
- প্রতিক্রিয়াহীন বা উগ্র স্বভাবের।
তবে মাতৃদুগ্ধপান করালে স্থূলতার ঝুঁকি কমে।
আমরা সাধারণত বি এম আই( BMI) বা বড়ি মাস ইনডেক্স(Body mass index) এর মাধ্যমে স্থূলতা পরিমাপ করে থাকি যার সূত্র হলো কেজি/ মিটার² যা দুই বছরের অধিক শিশুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। দুই বছরের কম বয়সের শিশুদের ওজন/ উচ্চতার পারসেন্টাইলে হিসাব করা হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বিএমআই যদি ২৫ থেকে ৩০ এর মধ্যে হয় তাহলে তাকে অতিরিক্ত ওজন এবং ৩০ এর বেশি হলে স্থূলতা বা অভেসিটি বলা হয়।
জীবনের তিনটি সময়ে স্থূলতার সম্ভাবনা বেশি থাকে । যেমনন : শৈশবে, সাড়ে পাঁচ বছরের পরে এবং প্রারম্ভিক প্রাপ্ত বয়সে।
BMI ছাড়াও নিন্মুক্ত নিয়মে স্থূলতাকে পরিমাপ করা যায় যেমন:Skin fold thickness measurements,Bioelectrical impedance densitometry,Dual energy x- ray absorptiometry।
স্তুলতার কারণ :
- ক্যালোরি যত গ্রহণ করে তার চেয়ে যদি কম ব্যয় করে।
- দৈহিক জিনগত বৈশিষ্ট্য।
- অতিরিক্ত খিদে পাওয়া।
- কম দৈহিক পরিশ্রম।
- ক্যালোরি কম খরচ করা।
- খাবারের প্রাচুর্য।
- অধিক ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ।
- শর্করা বা মিষ্টি সমৃদ্ধ পানীয়।
- ঘুমের সল্পতা।
- জিনগত সমস্যা যেমন Melanocortin 4 receptor deficiency,Propiomelanocortin deficiency.
- হরমোন জনিত সমস্যা।যেমন:Cushing syndrome,Growth hormone deficiency,Hyperinsulinism,Hypothyroidism,Pseudohypoparathyroidism.
- জেনেটিক সিনড্রোম :Prader- willi syndrome,Down syndrome, Carpenter syndrome.
স্থূলতার সাথে অন্যান্য রোগ বা উপসর্গ :
- Dyslipidemia: যদি HDL<40,LDL>130, Total Cholesterol >200.
- হাই ব্লাড প্রেসার (HTN): সিস্টুলিক বা ডাইয়েস্টুলিক ব্লাড প্রেসার যদি লিঙ্গ ও উচ্চতা বেদে যদি ৯৫ পারসেন্টাইলের উপরে হয়।
- Type 2 ডায়াবেটিস।
- মেটাবলিক সিনড্রোম ( Metabolic syndrome): central adiposity,Insulin resistant, Dyslipidemia,হাই ব্লাড প্রেসার (HTN), Glucose intoleranece.
- Polycystic ovary syndrome: Irregular menstruation, hirtutism, acne, insulin resistant.
- পরিপাকতন্ত্রের রোগ: Gall bladder disease, NAFLD( Non alchoholic fatty liver disease): Hepatomegaly, Abdominal pain, Dependent edema, Increase transaminases, fibrosis, cirrhosis.
- স্নায়বিক রোগ :Pseudotumor cerebri, Headache, visual problem, papilledema, migraine.
- অর্থোপেডিক : Blount disease, musculoskeletal pain, SCFE(Slipped capital femoral epiphysis).
- সাইকোলজিকাল : আচরণগত সমস্যা।
• শ্বাসনালীর রোগ : হাঁপানি, Obstructive sleep apnea.
স্থূলতার মূল্যায়ন (Evaluation of obesity):
- রোগের বিস্তারিত ইতিহাস জানতে হবে।
- Growth chart অনুযায়ী স্থূলতা এর পরিমাপ করতে হবে।
- কোন ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে ওবেসিটি হচ্ছে কিনা সেটা দেখতে হবে। যেমন : Prednisolone, Risperidone, Lithium, valproate, Beta blocker.
- টিভি মোবাইল কম্পিউটারে বেশি সময় ব্যয় করে কিনা জানতে হবে।
- ফ্যামিলিতে ওবেসিটির ইতিহাস আছে কিনা।
- ওবেসিটি হওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ বয়স :শিশুর প্রারম্ভিক বয়স (infancy),সাড়ে পাঁচ বছর বয়সের দিকে, বয়সন্ধিকনে।
- হঠাৎ যদি কারো বিএমআই বেড়ে যায় সে ক্ষেত্রে মেডিকেল কারণ, ফ্যামিলিগত বা ব্যক্তিগত শারীরিক বা মানসিক স্ট্রেস।
- ওজনের সাথে সাথে উচ্চতা যদি কম বাড়ে তাহলেও ওবেসিটি হতে পারে।
- দৈহিক পরিশ্রম যদি কমে যায় এবং ঘরের বাইরে খাওয়ার অভ্যাস যদি বেশি থাকে তাহলেও ওবেসিটি হতে পারে।
- হাইট ভেলোসিটি (Hight velocity)যদি কমে যায় তাহলে হরমোন জনিত রোগের কারণে ওবিসিটি হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- জেনেটিক সিনড্রোম : যদি extreme hyperphagia, Dysmorphic features, cognitive impairment, vision & hearing abnormality or short stature.
- সেকেন্ডারি ওবেসিটি : congenital disorder: myelodysplasia, muscular dystrophy ইত্যাদি কারণে শারীরিক কর্মক্ষমতা কমে যায় বলে ওজন বৃদ্ধি পায়।
- ঘুমের সমস্যা থাকলেও কিন্তু ওবেসিটি হতে পারে।
- বিস্তারিত শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে (Detailed physical examination).
- ল্যাবরেটরী পরীক্ষা নিরীক্ষা : OGTT, Lipid profile, Liver function test, Hormone level, Genetic test.
আধুনিক ব্যবস্থাপনা:
- Target Behaviors.
- Self monitoring.
- Goal setting.
- Stimulus control.
- Self efficacy.
- Self management skill.
- আচরণিক পরিবর্তন :চিনি যুক্ত কোমল পানীয় শরবত পরিহার করা, নিম্নমানের খাবার পরিহার করা, শারীরিক ব্যায়াম, টিভি মোবাইল কম্পিউটারে সময় কমিয়ে আনা, নিয়মিত নিজের ওজন পরীক্ষা করা,
- intervention যদি পরিবার কেন্দ্রিক এবং শিশুর বিকাশেরবয়সের লেভেল অনুযায়ী হয় তাহলে অধিক কার্যকর।
- সকল শিশু ও কিশোর একই ব্যবস্থাপনায় ভালো ফলাফল নাও আসতে পারে তাই ইন্টারভেনশন হতে হবে স্বতন্ত্র (individualized).
- ক্লিনিক্যাল ব্যবস্থাপনা ব্যয়বহুল এবং সহজলভ্য নয়।
- সঠিক পরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণ করা :অধিক ক্যালরি ও কমপুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার পরিহার করতে হবে। অধিক ফলমূল, শাখ সবজি, কোষা যুক্ত শস্য,চর্বিহীন মাংস, মাছ ও পোল্ট্রি খাওয়া অভ্যাস করতে হবে।পুষ্টিগুণ অনুযায়ী খাবার পছন্দ করতে হবে। কমপুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার ও অতিরিক্ত ক্যালোরি কদাচিৎ খেতে পারবে।
- Traffic light diet: Green,yellow &. Red. গ্রীন অর্থাৎ সবুজ গ্রুপের খাবার ইচ্ছামত খেতে পারবি আর ইয়েলো বা হলুদ গ্রুপের খাবার মাঝারি পরিমাণ খেতে পারবে আর রেড বা লাল গ্রুপের খাবার লিমিট করে খেতে পারবে।
5-2-1-0 কৌশল :
দৈনিক পাঁচ বা তার বেশি ফলমূল খাবে, শিশুর বয়স যদি পাঁচ বছরের অধিক হয় তবে দৈনিক ২ ঘন্টার কম এবং পাঁচ বছরের কম হলে দৈনিক এক ঘন্টার কম কম্পিউটারে /টেলিভিশনে সময় ব্যয় করবে(স্ক্রিন টাইম) , দৈনিক এক ঘন্টা বা তার বেশি ব্যায়াম করবে এবং সুগার সমৃদ্ধ পানীয় বা খাবার পরিহার করবে।
- বেডরুমে কোন ডিভাইস ব্যবহার করবে না।
- বসে থাকার চেয়ে অ্যাক্টিভিটির মধ্যে থাকতে হবে।
- শিশু চিকিৎসায় জড়িত ব্যক্তিবর্গ শিশুর পরিবারকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং পুষ্টিজ্ঞান ও শারীরিক পরিশ্রম সম্পর্কে সম্মখ ধারণা দিবেন।
- এখনই বিএমআই বা ওজন দ্রুত কমে যাবে এরকম আশা করা উচিত না বরং ধীরে ধীরে ওজন কমানো বাঞ্ছনীয়।
- ব্যাপক ভিত্তিক সমন্বিত বিশেষায়িত টিম এর কাছে রেফার করতে হবে।
- ওষুধ : Metformin,Orlistat(<16years},Sibutramin,Exanatide.
- হরমোন দিয়ে চিকিৎসা।
- Bariatric surgery.
স্থূলতা প্রতিরোধ :
- মাতৃদুগ্ধ পান।
- ফলমূল সহজলভ্য করা।
- হাটতে অভ্যস্ত এরকম একটা সমাজ গঠন করা।
- দৈনিক অন্তত ১ ঘণ্টা শারীরিক পরিশ্রম করা।
- স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তৈরি করার সাথে জড়িতের প্রণোদনা দেয়া।
- অস্বাস্থ্যকর খাবার নিয়ন্ত্রণ করা।
গর্ভকালীন সেবা :
- বাচ্চা নেয়ার আগে বিএমআইকে স্বাভাবিক করা।
- ধুমপান পরিহার করা।
- মাঝারি পরিশ্রমের ব্যায়াম করা।
- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ধরা পড়লে রক্তের গ্লুকোজ কঠোরভাবে কন্ট্রোল করা।
- গর্ভকালীন ওজন বৃদ্ধিকে মনিটর করা (Within institute of medicine, IOM Recommendation).
প্রসব পরবর্তী ও শৈশবে যত্ন :
প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্র মায়ের দুধ এবং ৬ মাসের পর থেকে পুষ্টিকর পরিপূরক খাবার ও এক বছরের আগে জুস না দেয়া।
পরিবার ভিত্তিক সেবা:
- নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে খাবার গ্রহণ করা।
- আহারের সময় টিভি না দেখা।
- ছোট প্লেটে খাবার গ্রহণ করা।
- খাবারের টেবিল থেকে খাবারের পাত্র গুলা দূরে রাখা।
- মিষ্টি খাবার, পানীয় ও চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করা।
- খাবারকে পুরস্কার হিসেবে না দেখা।
- স্ক্রিনে সময় নিয়ন্ত্রণ করা।
স্কুল ভিত্তিক কার্যক্রম :
- বিস্কিট, চকলেট, সোডা ইত্যাদি পরিহার করা।
- সুপেয় পানির সুব্যবস্থা করা।
- শিক্ষকদেরকে পুষ্টি ও শারীরিক ব্যায়াম সম্পর্কে সম্মখ ধারণা দেয়া।
- ছাত্র-ছাত্রীদেরকে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার জীবনযাপন সম্পর্কে ধারণা দেয়া।
- সপ্তাহে অন্তত পাঁচবার ৬০ মিনিট বা তার অধিক ব্যায়াম করা।
- ” The walking school bus” by adult supervision.
সমাজ ভিত্তিক কার্যক্রম :
- ব্যায়ামের পরিবেশ পরিবার বান্ধব হতে হবে।
- খেলাধুলার নিরাপদ সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
- সামাজিক সংস্কৃতি অনুযায়ী সুষম খাবারের বাজার ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে।
চিকিৎসকের করণীয় : - স্থূলতার বায়োলজিক ও জেনেটিক ব্যাখ্যা রোগীর আপনজনকে বুঝিয়ে বলা।
- বয়স অনুযায়ী কত ওজন হওয়া দরকার সে সম্পর্কে ধারণা দেয়া।
- স্থূলতার শ্রেণীবিভাগ করা।
ফুড ইন্ডাস্ট্রি :
- বয়স অনুযায়ী খাবারের পুষ্টিগুণ লেভেল করা।
- এক্ষেত্রে সেলিব্রেটিদের সহায়তা নেয়া।
সরকার ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের করণীয় :
- স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপনের সাথে জড়িত খাবারে ফান্ড গঠন করা এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারে করারোপ করা।
- স্বাস্থ্যসম্মত খাবারে ভর্তুকি প্রদান করা।
- বাইসাইকেল জগিং ও হাঁটার জন্য ফুটপাতকে ব্যবহার উপযোগী ও আকর্ষণীয় করা।
- অপুষ্টিকর, জান্ক ফুড, সুগার সমৃদ্ধ খাবারের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা।
- শিশুদের জন্য ফাস্টফুড ক্রয় বন্ধ করা।
- শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের অভ্যাস তৈরি করা।
- শিশুদেরকে খাবারের জন্য শাস্তি না দেয়া।
- খাবারকে পুরস্কার হিসেবে না দেয়া।
- মা-বাবা বড় ভাই বোন বন্ধু-বান্ধবকে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের মডেল হিসেবে উপস্থাপন করা।
- শিশুকে বৈচিত্র্যময় খাবারের অভিজ্ঞতা প্রদান করা, নতুন খাবার বারবার দেয়া যাতে এটি তার কাছে পছন্দনীয় এবং গ্রহণযোগ্য হয়।
- ঘরে কি ধরনের খাবার থাকবে, পিতা-মাতাকে সেদিকে কর্তব্যপরায়ন হওয়া।
- আহারের তৃপ্তি সম্পর্কে বয়স্কদের তুলনায় শিশুরা বেশি সংবেদনশীল তাই খাবারের প্লেট পরিষ্কার করে আহারের জন্য জোর করা উচিত নয়।
- ফলোআপ ভিজিটের সময় শিশুর ওজন ও বিএমআই পরীক্ষা নিরীক্ষা করা।
- ছয় মাস বয়স থেকে খাবার শুরু করা এবং খাদ্য শস্য, ফলমুল, শাকসবজি, মাছ মাংস মুরগি এক বছর বয়সের মধ্যে শুরু করা এবং সুগারসমৃদ্ধ খাবার ও পানীয় শিশুকে না দেয়া।
- পিতা-মাতার ভূমিকা কর্তৃতবাদী না হয়ে কর্তৃত্বপূর্ন হওয়া উচিত যেমন পিতা-মাতা শিশুদের জন্য লিমিট সেট করে দিবেন এবং কানেক্টিভিটি তৈরিতে সহায়তা করবেন।
- শিশু বিশেষজ্ঞরা শারীরিক পরিশ্রমকে উৎসাহিত করবেন এবং টিবি, কম্পিউটার, ভিডিও গেমকে নিরুৎসাহিত করবেন।
- নাস্তার সময় টিভি দেখবে না।
- স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপনের বৈশ্বিক উদ্যোগ : EPIODE, Shape up somerville. Lets move( by Michelle Obama)
- যেকোনো সফল প্রোগ্রামের ৪ টি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো :অঙ্গীকার, সম্পদের সুষম ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রমাণ ভিত্তিক অনুশীলন।
সর্বোপরি টুলকিটস, অনলাইন তথ্য উপাত্ত, প্রশিক্ষণের সুব্যবস্থা ও প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন গড়ে তোলা আমাদের সকলেরই উচিত।
ওবেসিটি সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য শিশুদের আউটডোরে খেলতে দিতে হবে, টেলিভিশন দেখা, মোবাইল ফোনে গেমস খেলা, ভিডিও গেমস খেলার আসক্তি কমাতে হবে, খাবার দাবারে সচেতন হতে হবে। বাড়িতে তৈরি সুষম খাবার খেতে উৎসাহিত করতে হবে।
ডাঃ মনির উল্লাহ
নবজাতক ও শিশু-কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মনির উল্লাহ পার্কভিউ হসপিটালে কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়মিত রোগী দেখছেন। বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের এই কর্মকর্তা নবজাতক, শিশু ও কিশোর বয়সের মেডিকেল সমস্যার চিকিৎসা পরামর্শ দেয়া ছাড়াও শিশুর পুষ্টি, ব্রেস্ট ফিডিং ও সরকারি বেসরকারি টিকাদানের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিচ্ছেন।