কিভাবে বুঝবেন হার্টের ব্যথা?

পৃথিবীতে যেসব দেশে হার্ট এটাকের হার বেশি,বাংলাদেশ তার অন্যতম। কম বয়সী মানুষের হার্ট এটাকের হিসেবে বাংলাদেশ একেবারে প্রথম দিকে। কম বা মাঝবয়সী কারো হার্ট এটাক ব্যক্তি,পরিবারের ও রাস্ট্রের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়। দেখা যাচ্ছে যার হার্ট এটাক হয়েছে তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি।একদিকে হার্ট এটাকের বিশাল ধাক্কা অন্যদিকে ঔষুধ প্রচুরের খরচ, সব মিলিয়ে রোগীর মানসিক ও আর্থিক বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়ে।
হার্ট এটাকের প্রধান উপসর্গ হচ্ছে বুকে ব্যথা। কিন্তু বুকে ব্যথা হলেই সব ব্যথা হার্ট এটাকের ব্যথা না।আমাদের দেশে আমরা আবার ব্যথা যাই হোক না কেন,মনে করি এটা গ্যাস্ট্রিক ব্যথা।
আমাদের প্রচলিত ধারণা,যত দোষ,গ্যাস্টিক ঘোষ।
পেটে ব্যথা গ্যাস্ট্রিক, বুকে ব্যথা গ্যাস্ট্রিক, মাথায় ব্যথা গ্যাস্ট্রিক, পায়ে ব্যথা তাও গ্যাস্টিক।
রাতে ঘুম হয় না গ্যাস্টিক,পাতলা পায়খানা গ্যাস্টিক,পায়খানা কষা গ্যাস্টিক। আমরা সব কিছুকেই গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা মনে করি।
এমনকি হার্ট এটাকের রোগীরা গ্যাষ্ট্রিক মনে করে হাসপাতালে আসতে দেরি করে। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়,অনেক রোগী মারা যায়। অনেকের ব্লক খোলার ঔষুধ দেয়ার সময় চলে যায়। এই ওষুধগুলো ব্যথা উঠার ১২ ঘন্টার মধ্যে দিতে হয়।
তাহলে আমরা কিভাবে বুঝবো কোনটা হার্ট এটাকের ব্যথাঃ
- হার্ট এটাকের ব্যথা সাধারণত হঠাং করে শুরু হওয়া তীব্র ব্যথা।
- যেটা পুরো বুক জুড়ে হয়।
- বুকে চাপ বা বুক ভারী লাগে।
- ব্যথা গলা,নিচের থুতনী,বাম বা ডান হাতের বাহুর দিকে যেতে পারে।
- ব্যথার সাথে শরীরে ঘাম দেয়া,বমি বমি ভাব,বমি হওয়া এসব থাকতে পারে।
- এই ব্যথাটা পরিশ্রম বা ইমোশনের সাথে বাড়ে,
- বিশ্রাম বা জিহ্বার নীচে স্প্রে নিলে কমে।
- সাধারণত ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে থাকে।
মোটামুটি এরকম ব্যথা হলে আমরা এটাকে হার্ট এটাকের ব্যথা বলে মনে করি। তবে ডায়াবেটিক,বয়স্ক রোগী ও মহিলাদের ক্ষেত্রে হার্ট এটাকের ব্যথা সবসময় এমন নাও হতে পারে।
★এই ব্যথার সাথে খাবার বা খালি পেটের সম্পর্ক নাই।যে ব্যথা খাবার খেলে বা খালি পেটে বাড়ে সেটা সাধারনত গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা।
★শ্বাস বড় নিলে বা এইপাশ ঐপাশ করলেও হার্টের ব্যথা বাড়ে বা কমে না।শ্বাস বা শরীরের পজিশন চেঞ্জ করলে যদি ব্যথা বাড়ে তাহলে এটা ধরে নেয়া এটা বুকের মাংসপেশীর ব্যথা।
★অনেকের ক্ষেত্রে হার্ট এটাকের বিভিন্ন জটিলতার জন্য খুব শ্বাসকষ্ট,শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া,প্রসাবের পরিমাণ কমে যাওয়া এসব থাকে।
★★★এরকম ব্যথা হলে সাথে সাথে চিকিৎসক বা নিকটস্থ হাসপাতালে চলে যেতে হবে।
কাদের হার্টের রক্তনালী ব্লকের সম্ভাবনা বেশিঃ
হার্টের রক্তনালী ব্লক হওয়া একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া।এখানে বংশগত,জীবনযাপনের পদ্ধতিসহ বিভিন্ন ফ্যাক্টর জড়িত।হার্টের রক্তনালী ব্লক যে কারো হতে পারে,তবে কিছু কিছু ফ্যাক্টর এই সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।
যেমন-
- ধূমপায়ী
- ডায়াবেটিসের রোগী
- হাইপ্রেসারের রোগী
- স্থুলতা বা যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি
- যাদের ফ্যামিলিতে হার্টের অসুখ আছে
- এছাড়া একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সমবয়সী পুরুষের হার্ট এটাকের সম্ভাবনা মহিলাদের চেয়ে বেশি।
যদি উপরে বর্ণিত ব্যথার সাথে রোগীর যদি এসব ফ্যাক্টরের এক বা একাধিক থাকে,তাহলে এটা হার্টের ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।ফ্যাক্টরের সংখ্যা যত বেশি,হার্ট এটাকের সম্ভাবনাও তত বেশি।
তাই গ্যাস্ট্রিক ব্যথা মনে করে হার্ট এটাকের ব্যথাকে উড়িয়ে দিতে গেলেই বিপদ। আসুন সবাই সচেতন হই।

ডাঃ ইকবাল মাহমুদ
ডাঃ ইকবাল মাহমুদ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি সম্পন্ন করার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হৃদরোগের উপর উচ্চতর ডিগ্রি এমডি সম্পন্ন করেন। বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের এই কর্মকর্তা বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হসপিটালের হৃদরোগ বিভাগে কর্মরত আছেন এবং কনসালটেন্ট কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে পার্কভিউ হসপিটালে রোগী দেখছেন।